গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায়

 প্রিয় পাঠক গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায় অনেক জায়গায় জানার জন্য জিগ্যেসা করেছেন বা খোঁজাখুজি করেছেন তারপর আপনি সঠিক তথ্য পাছেন না তো সমস্যা নাই আজকে আমরা এই আটিকেল মাধ্যমে গমের বৃদ্ধি ফলন পাশাপাশি গম চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর পেতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।



আপনার যদি গম চাষ জানা থাকে বা জানতে চান তাহলে গম চাষ করে আপনি অল্প সময়ে লাভবান হতে পারবেন গমের বিষয়ে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জানতে অবশ্যই নিচের অংশটুকু পড়ুন

ভূমিকা 

আমাদের দেশে ভাতের পরে যে খাদ দুটির চাহিদা বেশি সেটি হল আটা-ময়দা বা গমের রুটি এবং অন্যান্য দেশে গম প্রদান খাদ্য আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত যা আমাদের দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ হয় বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষি কাজের সাথে জড়িত এজন্য বাংলাদেশের মানুষকে মাছে ভাতে বাঙালি বলা হয় 

আমাদের দেশে গম মূলত রুটি করার জন্য চাষ করা হয় এছাড়া গম আমাদের দেশের গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় আমাদের দেশে গমের চাহিদা ও আমদানি বাড়ার ক্ষেত্রে এখন কিছু গম উৎপাদনে বেশি উচ্ছ্বাসিত গম একটি শীতকালীন ফসল গম আমাদের দেশে জুলাই থেকে আগস্টের মাঝামাঝি রোপন করা হয়ে থাকে

গম চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গম চাষ একটু বেশি হয় জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজ্যে কুষ্টিয়া যশোর ফরিদপুর দিনাজপুর বগুড়া রংপুর ফরিদপুর জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গম চাষ হয়ে থাকে গম চাষের জন্য সাধারণত জমি উঁচু মাঝারি হলে অনেকটা ভালো হয় উপযোগী গম চাষের জন্য । তবে নিতু জমিগুলোতে চাষ করাব যায়। গম চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী
 বা ফলন বেশি উৎপাদন হয় বলে মনে করা হয় এবং পানি সহজে নিষ্কাশিত হয় এমন মাটি জমিতে চাষ করা যায় এবং লবণাক্ত মাটির ক্ষেত্রে গমের চাষ বা ফলন কম হয় গমের বীজ বোনার সময় প্রয়োজন মাফিক সার প্রয়োগে করতে হবে বীজ বোনার সময় জমিতে থাকা মাটির নিচে পোকামাকড় গুলো যদি দমন করা যায় তাহলে গাছের চারা গুলো অনেকটা সুস্থ সবল বা তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে 

বীজ বোনার সময় অবশ্যই দেখে শুনে বীজ বপন করতে হবে বীজ যদি রোগের প্রকোপ থেকে মুক্ত রাখা যায় তবে ফলন বৃদ্ধি হার অনেকটা থাকে গমের বীজ বোনার জন্য নাঙ্গল অথবা পাওয়ার টিলার যন্ত্রের সাহায্যে কম সময়ে গমের বীজ বোনা যায় এবং জমিতে মই দিলে সেচ দেওয়ার সময় অনেক সুবিধা পাওয়া যায়

গমে সার প্রয়োগ পরিমাণ তালিকা

ফসল উৎপাদন করার জন্য সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।সার প্ররিমানে সার জমিতে না দিলে ,ফসল উৎপাদন কম.হয় এবং চারা গজানোর  দেরি হয় ।তাই ফসল অধিক ফলন পেতে এবং জমির উর্বরতা বাড়াতে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা জুরুরি 

সারের নাম

প্রতি হেক্টর জমিতে/ সেচ ছাড়া

সেচ সহ সারের পরিমাণ

 

সারের পরিমাণ বা কেজি

কেজি

ইউরিয়া

১৪০ -১৮০

১৮০-২২০

জিপসাম

৭০-৯০

১১০-১২০

টিএসপি

১৪০-১৮০

১৪০-১৮০

এম ও পি

৩০-৪০

৪০-৫০

গোবর কম্পোস্ট সার

৭-১০

৭-১০


গম চাষের উপযুক্ত সময় 

গম একটি শীতকালীন ফসল এবং বাংলাদেশের শীতকাল খুবই ক্ষণস্থায়ী এই জন্য গমের ভালো ফলন পেতে পাওয়ার জন্য সঠিক সময়ে গমের বীজ বপন করা উচিত। দেশের নভেম্বর মাসের শুরুতে বা ডিসেম্বর মাস শুরুর দিকে উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয়বাংলা মাসের অনুযায়ী হলে কার্তিক মাসের শেষ অথবা অগ্রহায়নের তৃতীয় সপ্তাহ হলেই বীজ বপন সম্ভব এতে গমের ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক সময়ে গম তোলা সম্ভব হয়।

গমে পোকামাকড় দমন পদ্ধতি 

গম চাষ রোগ দমন গমের মধ্যে তেমন একটা পোকামাকড় আক্রমণ দেখা যায় না তবে ইন্দুরের উপদ্রব একটু অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি দেখা যায় এছাড়া কিছু গমের গাছে পাতায় ছত্রাক জনিত বিশেষ কিছু রোগ দেখা দেয়।আবহাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা যায় রোগ গুলো যেমন হলো

ইন্দুরের উপদ্রব 

ইন্দুরের উপদ্রব সাধারণত গমের শিস আসার পরপর দেখা দেয় বা শুরু করে এবং গম পাকার উপযুক্ত সময়ে গমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে । ইন্দুর দমনের ক্ষেত্রে বাজার থেকে বিষ টোপ বা ইন্দুর মারার যন্ত্র ইন্দুরের চলাচলের রাস্তায় মাঝে রেখে দিলে অনেক ইন্দুর দমন করা সম্ভব অথবা কলার ডাল কেটে লম্বা লম্বা করে আকৃতির জমির চারপাশে বিছিয়ে রাখতে হবে

এতে ইন্দুর কলার ডাল গুলোকে সাপ মনে করে অনেকটা ভয় পাবে এতে কিছুটা হলেও অথবা কলার ডাল কেটে লম্বা লম্বা করে আকৃতির জমির চারপাশে বিছিয়ে রাখতে হবে এতে ইন্দুর কলার ডাল গুলোকে সাপ মনে করে অনেকটা ভয় পাবে এবং এতে কিছুটা হলেও গমের ক্ষতি কম হবে গমের ক্ষতি কম হবে এবং বাজার থেকে বিষাক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট এনে ইন্দুরের গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিলে ইন্দুর দমন করা সম্ভব

পাতার মরিচা ধরা 
গমের পাতার মরিচা রোগে শুরুতে গাছের উপর পাতার ছোট গোলাকার আকৃতির হলদে ভাব বা হলদে প্রকৃতি দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে এটি বাদামী বা কালচে রঙে রূপ পরিণত হয় এবং এই আক্রান্ত পাতায় ঘষা দিলে মরিচার ঘোরার মত লাগে। 

এই রোগের পাতার কাণ্ডেও দেখা যায় এবং গমের পাতার জল সে পুড়ে যায় প্রশিকোনালাঞ্জল জাতীয় বিষ বা ছত্রাক অথবা ট্রিড প্রোটেন্ট প্রাউড বিষগুলো ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর বিকালে গমের গাছের উপরে স্প্রে করুন

বীজের কালো দাগ
বীজের কালো দাগের ক্ষেত্রে গম খোচায় প্রথমে বাদামী বা কালো দাগ পড়ে আস্তে আস্তে পড়ে পুরো বীজে ছড়িয়ে পড়ে গমের এই ছত্রাক জনিত রোগ যথাসময়ে ব্যবস্থা না নিলে পরে সবগুলো বীজ নষ্ট বা কালচে রঙের হয়ে যেতে পারে 

যা বাজারে কোন মূল্য থাকে না তাই নিজের কালো দাগ দূর করতে প্রোপিকোনাজল পোটেন্ঠে ট্রিল দশ দিন পর পর দুই তিন বার করে বিকালে ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের উপর স্প্রে করুন এতে বীজের কালো দাগ দূর করতে অনেকটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে

গমের জাত

প্রতিভা সৌরভ কাঞ্চনা আকবর অগ্রণী গৌরব বারি গম ৩৩ গমের চাষ ইত্যাদি গমের বীজ সংগ্রহ বা চাষ করার জন্য আগে অবশ্যই পরিপূর্ণ ভালো বীজ নিতে হবে বীজের জাত দেখে নিতে হবে যা উচ্চ ফলনশীল এবং রোগমুক্ত

বিঘা প্রতি গমের ফলন 

আমাদের দেশে গমের চাহিদা থাকলেও ইদানিং উৎপাদন অনেকটা কমছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ না জানা এবং সঠিক সময়ে বীজ বপন করতে না পারা যার ফলে সঠিক ফলন উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন না 

কৃষকরা এবং দেশে আমদানির পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে তবে গবেষণা থেকে জানা যায় এক বিঘা জমি থেকে গমের ফলন আছে 8 থেকে 10 মন করে তবে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে এর উৎপাদন বাড়তে পারে বলেও পারে মনে করা হয়

বাজারে গমের দাম 

বাজারে আমাদের দেশে নানান রকমের বা নানান জাতের গম উঠতে দেখা যায় এবং এই গম গুলোর দাম গমের জাত বীজ ভালো-মন্দ যাচাই বাছাই করে নির্ধারণ করা হয় এবং দেশে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় এর মধ্য রয়েছে গম । এখন গম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং প্রতি মন ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা

গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায় 

গমের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য নালা অথবা ফিতা পাইপের সাহায্যে জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে ঠিক পরিমান মত পানি সেচ দিলে ফলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেকটা বেশি থাকে এবং বিঘা প্রতি 24 থেকে 25 কেজি ইউরিয়া 

এবং টিএসপি ১৮ থেকে ১৯ কেজি এবং এমওপি ছয় থেকে পাঁচ কেজি ১৫ থেকে ১৪ কেজি গোবর তার কম্পোস্ট সার হাজার থেকে ১২০০ কেজি দিলে গম উৎপাদন বৃদ্ধি ৫৮% সম্ভাবনা থাকে এবং জমি ঠিক পরিমান চাষ দেওয়া লাগবে

গম চাষের জন্য কোন মাটি উপযোগী 

গম চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হচ্ছে দোআঁশ মাটি বা এটেল মাটি এই মাটিতে গমের চাষ উৎপাদন বৃদ্ধি বেশি হয় আমাদের দেশের উত্তর অঞ্চলে গমের চাষ ভালো হয় এর মূল কারণ হচ্ছে এ অঞ্চলের মাটি গুলো দোআঁশ বা এটেল মাটি। জমি গুলো একটু উঁচু বা মাঝারি হয়ে থাকে যার জন্য গম চাষ উপযোগ মনে করা হয়

গম কাটার সময় 

ফসল ঠিক সময়ে কাটতে দেরি হওয়ায় ফসলের গুণমানের উপর খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাই সঠিক সময়ে কাটার উপযুক্ত সময় জেনে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন তা না হলে যখন ২০ শতাংশ গমের আদ্রতা ছড়িয়ে পড়ে তখন মাড়াই করতে অনেক অসুবিধা হয়। 

তাই আমাদের দেশে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত গম কাটার উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয় এবং গম দেরিতে কাটা হলে তখন দানাগুলো জমিতে ঝরে পড়ে যায় তা ছাড়াও কাটতে দেরি হলে পাখি ইন্দুরের প্রকোপ অনেকটা বেড়ে যায় তা এটি সঠিক সময়ে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন

লেখকের মন্তব্য 

প্রিয় পাঠক রাজশাহী ব্লকে আপনাকে স্বাগতম আশা করছি আপনি যে বিষয় নিয়ে খোঁজাখুঁজি করছিলেন সমস্ত আলোচনা পড়ে আপনার কাঙ্খীর উত্তর পেয়েছেন। আপনার যদি আর্টিকেল পছন্দ বা ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন সবাইকে এর বিষয়ে জানিয়ে করার আমন্ত্রণ জানাবেন এবং আমাদের ব্লকে ফলো এবং শেয়ার দিয়ে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪